খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাস
ইডেন মহিলা কলেজ তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী বা বাংলা প্রদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রথম মহিলা কলেজ। ইডেন বাংলার প্রথম সরকারি মহিলা বিদ্যালয়। এই কলেজটি শতাব্দী প্রাচীন, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত।১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে এটি বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। আজিমপুর এলাকায় বিশাল জায়গা জুড়ে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ইডেন মহিলা কলেজ অবস্থিত। কলেজের ৬ টি হোস্টেলের মধ্যে সবচেয়ে পুরানো ও বড় হোস্টেল ‘খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাস’ । অনেকের কাছে এটি পুরাতন হোস্টেল নামে অধিক পরিচিত। ১৯৯৬ সালে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইডেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুমা খোদেজা খাতুনের নামে এই হোস্টেলটির নামকরণ করা হয়েছে। মহিয়সী শিক্ষাবিদ খোদেজা খাতুন (১৫ আগস্ট ১৯১৭ – ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০) একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজ কর্মী।১৯৩৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বাংলার দ্বিতীয় মুসলিম নারী হিসেবে উক্ত ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪১ সালে কোলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ভারত বিভাগের পরে ১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।১৯৬০ সাল থেকে তিনি ইডেন কলেজের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি স্বর্ণ পদক(১৯৬৭), নুরুন্নেসা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী পদক (১৯৭৭), আব্দুর রাজ্জাক স্মারক পদক (১৯৮৪) সহ অনেক পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৬২ সালে ইডেন কলেজের বর্তমান ভবন নির্মিত হয়, একই সময়ে নির্মান করা হয় খোদেজা খাতুন হোস্টেল। ছাত্রীনিবাসটির মোট জায়গার পরিমান প্রায় ১ একর। তিনতলা বিল্ডিং এ রয়েছে ৭৫টি রুম, ৪টি হলরুম, ১টি টিভি রুম, ১ টি প্রসস্থ ডাইনিং , ১ টি নামাজঘর, ২ টি রিডিংরুম , ১ টি অফিসরুমএবং ৯ টি সিঙ্গেল রুম।কমনরুমে নিয়মিত পত্রিকা পড়ার সুযোগসহ দাবা, ক্যারম, টেবিল টেনিস ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহন করে শিক্ষার্থীরা আধুনিক তথ্যপ্রবাহের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করেছে। পূর্বের ডাইনিং ব্যবস্থা বিলোপ করে আধুনিক ক্যাফেটারিয়া চালু করা হয়েছে যেখানে ছাত্রীরা তুলনামূলক কম দামে মানসম্মত খাবার গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়াও রয়েছে অসুস্থ হলে আ্যম্বুলেন্স সুবিধা। দেশের বিভিন্ন অন্চল থেকে আগত অগনিত ছাত্রী এখানে পড়াশুনা করে নিজেকে গড়ছেন একই সাথে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করছেন। শুধু লেখাপড়া নয় খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক সামাজিক কর্মকান্ডসহ সহ পাঠক্রমিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন করে এই হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীনিবাসে কর্মরত আছেন ১৯জন কর্মকর্তা কর্মচারী। তাদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় প্রাচীন এই। আবাসিক ছাত্রীনিবাস সুষ্ঠুভাব্ পরিচালিত হচ্ছে। কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য এই হোস্টেলের সার্বিক উন্নয়নের ব্যপারে অত্যন্ত আন্তরিক।যে কোন সমস্যায় তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহন করেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এ ব্যাপারে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন শ্রদ্ধেয় উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসি বেগম। বয়সের ভারে ভবন সহ কক্ষগুলো কিছুটা জীর্ণ হলেও অনেক শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় থাকে বিশাল আয়তনের এই খোদেজা খতুন হল।অনেকের কাছে খোদেজা হল একটি আবেগের নাম। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী এই আবাসিক ছাত্রীনিবাস।সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের অপূর্ব সহঅবস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত খোদেজা খাতুন হোস্টেল অর্ধশত পেরিয়ে এগিয়ে চলছে শতবর্ষের মাইলফলক ছুঁতে।আমরা এই পথচলার গর্বিত অংশীদার। খোদেজা খাতুন হোস্টেলের প্রথম তত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক হালিমা খাতুন। বর্তমানে হোস্টেল সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর জাহানারা বেগম সহকারী সুপার জনাব ফাহমিদা এবং জনাব মোস্তারি সালেহীন।