শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন নারী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ইডেন মহিলা কলেজ। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে পত্রপল্লব সুশোভিত ছায়াসুনিবিপরিবেশে কলেজটির অবস্থান। এই কলেজ প্রাঙ্গনের দক্ষি পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস। এটি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠারটির সবচেয়ে বড় ছাত্রীনিবাস। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত, সুউচ্চ (১১ তলা বিষিষ্ট) এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্রীনিবাস। এর নামকরণ করা হয় সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবœধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সহধর্শিনী মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজবি এর নামানুসারে। দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর সকল ত্যাগ, অবদান সম্ভব হয়েছিল এই মহিয়সী নারীর সহযোগীতায়। ১৯৩০ সালের ৮ ই আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসজিলম পরিবারে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জন্ম গ্রহণ করেন। আরা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বরণ করি তাঁকে। ২০১৩ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর এই ছাত্রী বিনাসটির শুভ উদ্ভোধন করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কলেজের ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ছিল বিশাল এই ছাত্রীনিবাসটির।
বর্তমান অধ্যক্ষ মহদোয় প্রফেসর ড. শামসুননাহার ছাত্রীনিবাসের সকল বিষেয়ে অত্যন্ত আন্তরিক হোস্টেলেরযে কোন সমস্যা সমাধানে তিনি সবসময় তৎপর থাকেন। অদ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার বঙ্গমাতা হোস্টেলের ছাত্রীর নিবিড় পর্যবেক্ষনে আধুনিক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। অদ্যক্ষ মহোদয় কলেজের কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করেছেন যাঁরা হোস্টেলের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আমাদের সুচিন্তিত মতামত ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসটির পূর্ব প¦ার্শে কমলা রং শোভিত বড় গেইটের সামনের প্রশস্ত রাস্তা, রাস্তার অপর প¦ার্শের অবস্থিত সুবিশাল খেলার মাঠ, গেইটের প¦ার্শে দেয়ালে নুশোভিত বঙ্গমাতার ম্যুরাল, উত্তর প¦ার্শের শান বাধানো ঘাট সম্বলিত বড় পুকুর এবং ছাত্রীনিবাসের অভ্যন্তরে চুকতেই গেইটের কাছে গোলাপ, কসমস, ডালিয়া, হাসনাহেনা, নয়নতারা, গাঁদা, রঙ্গন, ¯øাভিয়া, জিনিয়া, মুসেন্দা, টগর, দোলনচাপা, বেলী, জনা ইত্যাদি বাহারী রংয়ের ফুলে সুশোভিত একটি সুন্দর বাগান, গুছানো ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সব মিলিয়ে ছাত্রীনিবাসটিতে তৈরী হয়েছে একটি মসোমুগ্ধকর পরিবেশ।
২০১৩ সালে ১০০ ছাত্রী নিয়ে শুরু হয় এ ছাত্রীনিবাস, বর্তমানে ছাত্রী সংখ্যা আর কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে । এ ভবনটিতে ছাত্রীদের বসবাসের জন্য রয়েছে মোঠ ২৫০ টি কক্ষ কক্ষগুলোর সামনে ছাত্রীদের চলাচলের জন্য রয়েছে লম্বা প্রশন্ত বারান্দা, যেখানে কাপড় শোকানোর জন্য ও রয়েছে সুব্যবস্থা। ভবনের বিভিন্ন তলায় ছাত্রীদের উপরে উটা ও নিচে নামার জন্য রয়েছে তিনটি গ্যাসেঞ্জার লিফ্ট। প্রত্যেক তলায় টারকোনায় রয়েছে কমোড ও প্যানা সম্বলিত টয়লেট ও সারবদ্ধ বাথরুম। বিভিন্ন তকলার বর্জ্য পর্দার্থ নিচের তলার বাইরে নির্দিষ্ট বক্সে ফেলার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। যেখান থেকে সংগ্রহ কারী অনায়াসেই বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিস্কার করতে পারে। নিচ তলায় রয়েছে ২১২ জনের আসন বিশিষ্ট একটি ক্যান্টিন, ১১২ জনের আসন বিশিষ্ট একটি ডাইনিং রুম। শুধু নিজতলায় নয়, চারতালয়। সাত তলায় এবং দশ তলায় রয়েঠে আরো তিনটি বড় পরিসরে ডাইনিং রুম। বিভিন্ন তলার। ডাইনং রুমে ছাত্রীদের কাবার উঠানোর জন্য রয়েছে ০১ টি কার্গো লিফ্ট। ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য হোস্টেলের প্রধান ফটক ও করিডরে ৫টি সি.সি. ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অদিকন্তÍ, ছাতীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে ০২ টি ঞঠ রুম, ০১ টির অবস্থান ৩য় তলায় এবং আর একটির অবস্থান ৬ষ্ঠ তলায়। ভবনে ৫ম তলায় আছে একটি নামাজ ঘর এবং বিনোদনের সুব্যবস্থা সম্বলিত ২য় তলায় একটি কমন রুম। ছাত্রীনিবাসের নিচতলার মাঝখানের খোলা জায়গায় ছাত্রীরা খেলতে পারে ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদি। কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত¡াবধানে পরিচালিত ক্যাফেটিরিয়ায় রয়েছে ছাত্রীদের জন্য চারবেলার খাবার আয়োজন। ছাত্রীনিবাসের প্রতি ফ্লোরে রয়েছে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রন কক্ষ, সেই সাথে রয়েছে সম্পূর্ণ ভবনে একবারে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। রয়েছে ভবনের চারকোনায় চর অংশের গ্যাস নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা। প্রতি ফ্লোরে চারকোনায় চারটি রান্নাঘর। সবমিলিয়ে এই ছাত্রীনিবাসে রয়েছে ছাত্রীদের বসবাস, পড়াশোনা ও নিনোদনের একটি সুন্দর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসে তত্বাবধায়ক হিসেবে আমি ফেরদৌসী বেগম, সহযোগী অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, ২০১৪ সালের মে মাসে যোগদান করি। বর্তমানে তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে আমার সাথে আছেন আরও একজন সহযোগী অধ্যাপক জনাব নাজমুন হানার, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, যিনি ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে সহকারী তত্ত¡াধায়ক। হিসেনে কর্মরত ছিলেন এবং ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে এ দায়িত্বে নিযুক্ত হন। আমাদের সাথে পরিচালনার দায়িত্বে আছেন আরও দু’জন সহকারী তত্ত¡াবধ্যায়ক জনাব আসমা সুলতানা, সহকারী অদ্যাপক, রসায়ন বিভাগ এবং জনাব কামরুন নাহার, প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ আমাদের সাথে অন্যান্য আরও যারা আছেন তারা হলেন, হাসিনা খানম, অফিস সহাকরী, মোছাঃ জুলফিয়া সুলতানা রুবি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর, ০২ জন ইলেকট্রিশিয়ান, ০৩ জন গার্ড, ০১ জন এম এল এস এস, ০১ জন মালী এবং ১০ জন ক্লিনার। ছাত্রীনিবাস পরিচালনার ক্ষেত্রে সকল সমস্যা সমাধানে সকলেই সার্বিকভাবে সাহায্য করে থাকেন। প্রত্যেকের আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা ছাত্রীনিবাসের সকল কার্যাবলি সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সাথে সহযোগীতায় আরও রয়েছেন সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এর কর্মকর্তাবৃন্দ। আমরা সকলের নিকট কৃতজ্ঞ।
গত তিন বছরে এই ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীরা খেলাপড়ার ক্ষেত্রে দেখিয়েছে সাফল্যের পরিচয় পাশাপাশি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ও ছাত্রীদের সাফল্য প্রশংসনীয়। তাদের সাফল্য ও নৈপুণ্যের কথা না বললেই নয়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশগ্রহন করে তারা ছিনিয়ে এনেছে জয়ের মুকুট। জাতীয় পর্যয়ে খেলার বিভিন্ন ইভেন্টে তারা ১ম ও ২য় স্থান অধিকার রেছে। আশাকরি এই ছাত্রীনবিাসের ছাত্রীরা পরবর্তী বছরেও তাদের সফলতা ধরে রাথকে।
তায়কোয়ানডোর সব কৌশলের উৎপত্তি মানুষের আতœরক্ষা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থেকে। শৃঙ্খলা, শারিরিক ফিটনেস, আতœবিশ^াস ও আতœরক্ষা এ চারটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তায়কোয়ানযো। এই কৌশলটি শরীর ও মনের শক্তিকে চমৎকার ভাবে সমন্বয় করে। এই প্রশিক্ষনেও এই ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের রয়েছে কৃতিত্বের ছাপ। “বিজয় দিবসে” তায়কোয়ানডোতে মহিলা সিনিয়রে ইডেন মহিলা কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়, তাদেরই পারদর্শিতায়।
আগামীতে এই ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষাত হবে, মানবিক গুনাবলীতে সম্বৃদ্ধ হবে, তাদের দক্ষতা ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করবে জীবনের বিভিন্ন সফণ্যের অঙ্গনে এবং দেম ও জাতির কল্যানে নিয়োজিত থাকবে এই আমার একান্ত প্রাত্যাশা।